বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই ভাষাটি যে অনেক সুন্দর ও মধুর তাতে কোন সন্দেহ নেই। ভাষাটিতে অনেকগুলো বর্ণ এবং তার সঙ্গে আরও অনেক সহযোগী চিহ্ণ ব্যবহৃত হওয়ায় প্রায় সকল ধরনের উচ্চারণই এ ভাষাতে করা যায়, যা পৃথিবীর অনেক ভাষাতেই সম্ভব হয় না। বর্ণ ও সহযোগী চিহ্নের আধিক্যের কারণে অনেক সময়ে আবার প্যাঁচও লাগে। এছাড়া আছে সংযুক্ত অক্ষর, শব্দের উৎপত্তিগত বিষয় ইত্যাদি। এগুলোও প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়। সব মিলিয়ে প্রচুর বানান ভুল হয়। বানান ভুল যাতে আর না হয় সে জন্যেই এই “বাংলা শুদ্ধ বানান ও বানানরীতির সমাহার”।
নোটটির শেষে কিছু গুরত্বপূর্ণ বিষয় সংযোজন করা হয়েছে, যারা বিশেষত কম্পিউটারে বাংলা লিখেন তাদের সকলেরই প্রয়োজন হতে পারে।
আমরা প্রায়ই শিরোনাম বা প্রধান লেখার পরে বিসর্গ ( ঃ) ব্যবহার করি, অতঃপর বিসর্গের পরে বিস্তারিত বক্তব্য লিখি। এটি ভুল। মনে রাখতে হবে, বিসর্গ একটি অক্ষর, ফলে আমরা যেখানে ‘বিসর্গ’ ব্যবহার করি সেটি আসলে বিসর্গ না হয়ে কোলন (:) হবে। যেমন- বাক্য পাঁচ প্রকারের, যথাঃ এখানে যথার পরে বিসর্গ দেওয়া হয়েছে, এটি ভুল; এখানে কোলন (:) হবে। সেক্ষেত্রে এটি হবে- বাক্য পাঁচ প্রকারের, যথা:
দ্রষ্টব্য: মোবাইলে রিদ্মিক (Ridmik) কিবোর্ডে বিসর্গ চেপে ধরে রাখলেই (লং প্রেস) কোলন হয়ে যাবে। আর আমরা যারা কম্পিউটারে অভ্র ফনেটিক ব্যবহার করে বাংলা লিখি তারা হয়ত চাইলেও কোলনটা সহজে দিতে পারি না, কোলন দিতে গেলে বিসর্গ এসে যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে বিসর্গ লেখার পর কিবোর্ড থেকে একসেন্ট (Accent) কি চাপতে হবে। এটির অবস্থান কিবোর্ডের Tab বাটনের উপরে এবং 1 এর বামে। বিসর্গ আসলে এটি একবার চাপলেই কোলন হয়ে যাবে।
দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন, কোলন এসবের পর সবসময় একটা স্পেস হবে, তবে আগে কোন স্পেস হবে না। আর হাইফেনের (-) পরে স্পেস দিতে নেই।
ভুল: সাবরিনা অনেক ভাল,সুন্দর ,লক্ষ্মী ও ভদ্র একটা মেয়ে।সে নিয়মিত ক্লাসেও উপস্থিত থাকে।
শুদ্ধ: সাবরিনা অনেক ভাল, সুন্দর, লক্ষ্মী ও ভদ্র একটা মেয়ে। সে নিয়মিত ক্লাসেও উপস্থিত থাকে।
অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে কোলনের আগে স্পেস ব্যবহার করতে দেখা যায়। আসল নিয়মটা হলো কোলনের আগে অর্ধ-স্পেস ব্যবহারের। কিন্তু ইউনিকোডে অর্ধ-স্পেস সাপোর্ট না করায় কোলনের আগে কোন স্পেস ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
বাংলায় সংক্ষিপ্ত শব্দে ডট ব্যবহার হবে। যেমন- ড. (ডক্টর), লি. (লিমিটেড), মি. (মিস্টার) ইত্যাদি। ইংরেজিতে Govt. (Government), Ltd. (Limited), Mr. (Mister), Dr. (Doctor)। ইংরেজি শব্দের সংক্ষিপ্ত বর্ণ রূপ (বা Abbreviation)-এ ডট ব্যবহার না করাই ভালো। যেমন— SSC, HSC, SMS, MMS, BCS, BA; বাংলায় এসএসসি, এইচএসসি, এসএমএস, এমএমএস, বিএ, বিকম ইত্যাদি। এক্ষেত্রে ডট ব্যবহার করা ভুল নয়, তবে আমাদের দ্বারা ভুলের সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- BSc, PhD লিখতে গিয়ে B.S.C., P.H.D. লেখা। BSc, PhD-তে ডট ব্যবহার করতে চাইলে B.Sc., Ph.D. এভাবে হবে। শুধু মাঝে ডট দিলে চলবে না (B.Sc, Ph.D) অর্থাৎ Sc. ও D.-এর পরেও ডট হবে; অনুরূপ বাংলাতেও। সুতরাং ভুল এড়াতে এবং বাংলা বানানের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ডট ব্যবহার বর্জণীয়। এসব শব্দে হাইফেন ( - ) বা কমাও ( , ) ব্যবহার করা যাবে না।
কি:
যেসব প্রশ্নের জবাব 'হ্যাঁ' বা 'না' দ্বারা দেওয়া যায়, অথবা মাথা নেড়ে বা সার্বজনীন ইশারায় দেওয়া যায় সেক্ষেত্রে 'কি' ব্যবহৃত হবে। যেমন:
সাবরিনা কি আমাকে চেনে?
তোমার নাম কি যুক্তিযুক্ত?
অনিমেষ কি গিয়েছিলে?
মনে রাখা দরকার যে, এভাবে ব্যবহৃত এই 'কি' শব্দটি হচ্ছে অব্যয় পদ।
অন্য বর্ণের সাথে একসঙ্গে ‘কি’ এর ব্যবহার হয়। যেমন:
কিনা- ফারিহা আজ কলেজে যাবে কিনা জানি না।
নাকি- তানিয়া আজ দুপুরে নাকি ভাত খায়নি।
কিরে- কিরে বন্ধু, আজ ক্লাস করবি না?
কিসে- হা হা, কিসে কী হল। (‘কি’ ও ‘কী’ একসঙ্গে লেখা)
কী:
যেসব প্রশ্নের জবাব 'হ্যাঁ' বা 'না' দ্বারা দেয়া যায় না, অথবা মাথা নেড়ে বা সার্বজনীন ইশারায় দেওয়া যায় না, বরং উদ্ধৃতিমূলক কিছু জানতে চাওয়া হয়, সেক্ষেত্রে 'কী' ব্যবহৃত হবে। যেমন:
তোমার নাম কী?
নিশাত কী বলতে চাও, বলো।
কী বিষয়ে অনার্স করছো?
কী থেকে তেল হয়?
কী জন্য রেগে গেলে?
কী শীত কী গ্রীষ্ম!
মনে রাখা দরকার যে, এভাবে ব্যবহৃত এই 'কী' শব্দটি হচ্ছে সর্বনাম পদ।
বিভিন্ন পদরূপে ‘কী’ ব্যবহৃত হয়। যেমন:
কী আনন্দ! - বিশেষণ
কী সুন্দর! কী অপরূপ! - বিশেষণের বিশেষণ
তুমি কী খাবে? - সর্বনাম
কীভাবে? - ক্রিয়া-বিশেষণ।
(কীভাবে বানানটি নিয়ে মতদ্বৈধতা আছে, কেউ বলেন এটা হবে ‘কিভাবে’)
‘কি’ এবং ‘কী’ ব্যবহারের ভুলটি আমাদের সবচেয়ে বেশি হয়। সিংহভাগই আমরা সব জায়গায় কি ব্যবহার করি। অথচ কেবল ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ বোধক উত্তর যেসব প্রশ্নের হয় সেসব ক্ষেত্রে ‘কি’ হবে। একটু খেয়াল করে কয়েকদিন চর্চা করলেই ভুলটি কাটিয়ে উঠা সম্ভব। উত্তরের পার্থক্যটা মাথায় রেখে লিখলেই ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
ক্রিয়াপদের শেষে ‘ই’ থাকবে যখন বাক্যের কর্তা হলেন উত্তম পুরুষ (1st Person)। যেমন- আমি খাই।
আর নাম পুরুষ (3rd Person) এর ক্ষেত্রে ক্রিয়াপদের শেষে ‘য়’ থাকবে। যেমন- সে খায়।
মধ্যম পুরুষ (2nd Person) এর ক্ষেত্রে ক্রিয়াপদের শেষে ‘ও’ থাকবে। যেমন- তুমি যাও, বিস্কুট খাও।
এছাড়া কোনো শব্দের শেষে ‘ই’ যুক্ত হয় ওই শব্দের উপর জোর দেওয়ার জন্য। যেমন-
১) আমিই করব। (অর্থাৎ অন্য কেই নয় আমি করব)
২) আমি করবই। (অর্থাৎ কাজটা করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ)
৩) এখনই যেতে হবে। (অর্থাৎ দেরি করা যাবেনা)
কোনো শব্দের শেষে ‘য়’ বিভক্তি আকারেও থাকতে পারে। যার অর্থ ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন- পাখিরা বাসায় (বাসা তে) ফিরেছে।
এছাড়া শব্দের শেষে ‘ও' থাকতে পারে আর একটি কারণে। যেমন- আমিও যাব। (I shall go too. অর্থাৎ also বা too বোঝাতে।)
অনুগ্রহ করে কেউ ‘ই’ এবং ‘য়’ এর ব্যবহার গুলিয়ে ফেলবেন না। আমি যাই, সে যায় না লিখে আমি যায়, সে যাই লিখলে কেমন ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত লাগে। খুবই দৃষ্টি ও শ্রুতিকটু এটা। এই ‘ই’ ও ‘য়’ এর ব্যবহারটা বিশেষভাবে মনে রাখবেন।
ভুল: সব বন্ধুদেরকে বলেছি।
শুদ্ধ: সব বন্ধুকে বলেছি।
ঋ, র, ষ বর্ণের পরে দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়; যেমন: ঋণ, বর্ণ, কারণ, ধারণা, দারুণ, বিষ্ণু, বরণ, ঘৃণা।
যদি ঋ, র, ষ বর্ণের পরে স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ, য, ব, হ থাকে; তার পরবর্তী দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়ে যায়; যেমন : কৃপণ, নির্বাণ, নির্মাণ, পরিবহণ, গ্রহণ, শ্রবণ।
ট-বর্গের পূর্বের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়, যেমন : বণ্টন, লুণ্ঠন, খণ্ড, ঘণ্টা।
বাংলা ক্রিয়াপদের অন্তঃস্থিত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না, যেমন : ধরেন, মারেন, করেন।
বিদেশি শব্দের দন্ত্য-ন কখনোই মূর্ধন্য-ণ হয় না; যেমন : কোরান, জার্মানি, ফরমান, ফ্রান্স, রিপন, লন্ডন, ড্যান্ডি, ইন্ডিয়া/ ইনডিয়া, প্রিন্ট, পেন্টাগন, মডার্ন, ইস্টার্ন, পর্নোগ্রাফি, কর্নার, বার্ন, হর্ন, পপকর্ন।
সন্ধি বা সমাসনিষ্পন্ন শব্দে ণ হয় না; যেমন: দুর্নীতি, দুর্নিবার, দুর্নাম, ত্রিনয়ন।
মানুষ “ন আর ণ”-এই দুটোর মধ্যে এতো বেশি গোল পাকায়, এটা ধারণার বাইরে। ছোটোখাটো বানান, যেমন- কারণ, নিয়ন্ত্রণ, সাধারণ বানানেও অনেকেই দেদারসে ‘ন’ ব্যবহার করে। অথচ এসব জায়গায় ‘ণ’ হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ধারণা ও দারুণ বানানে ণ হলেও ধরন ও দরুন বানানে ন। বর্ণ থেকে উদ্ভূত বরনে ন হলেও বরণ করে নেয়ার বরণে ণ। এছাড়া ধরনা, ঝরনা/ঝর্না বানানে ন।
'দরিদ্র' বিশেষণ আর 'দারিদ্র্য' ও 'দরিদ্রতা' বিশেষ্য। 'দারিদ্রতা' বলে কোনো শব্দ নেই।
'সরণ' মানে রাস্তা, সরণ থেকে 'সরণি'। যেমন- রোকেয়া সরণি, বিজয় সরণি, প্রগতি সরণি। স্মরণ মানে মনে করা। যেমন- স্মরণসভা। সরণির সাথে স্মরণের কোনো সম্পর্ক নেই।
'পরা' আর 'পড়া' এক না। কেবল পরিধান করা অর্থে 'পরা' এবং বাকি সব ক্ষেত্রে 'পড়া'। যেমন-
পরা:
আমি পাঞ্জাবি পরি।
বাবা চশমা পরেন।
সে শাড়ি পরেছে।
চাচি বোরকা পরতেন।
মা শাড়ি পরেছেন।
নানি চাদর পরতেন।
সেদিন নীল পাঞ্জাবি পরেছিলাম, আজ লাল পাঞ্জাবি পরব।
সাবরিনা চোখে কাজল পরতে পছন্দ করে।
কোনোমতে খেয়ে-পরে বেঁচে আছি।
আমি কারোরটা খাইও না, পরিও না।
সেদিনের ঐ শাড়ি-পরা বালিকাটিকে আর কোথাও দেখিনি।
কে শাড়ির ওপর ব্লাউজ পরল, আর কে ব্লাউজের ওপর শাড়ি পরল; তাতে কার কী আসে-যায়? যার যা ইচ্ছে, পরুক!
পড়া:
সে বই পড়ে।
বৃষ্টি পড়ছে।
সে প্রেমে পড়েছে।
তিনি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছেন
প্রশ্ন কমন পড়েনি।
শেয়ারবাজার পড়ে গেছে।
বই পড়ছি।
গাছ থেকে আম পড়ল।
লোকটা রিকশা থেকে পড়ে গেল।
বাজারে আলুর দাম পড়ে গেছে।
বেজায় গরম পড়েছে।
রাগ পড়ে গেছে।
ভারি বিপদে পড়েছি।
অর্থের পার্থক্যটা মাথায় রেখে লিখলে ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
ধরন ও দরুন বানানে ন। ধারণ, ধারণা, দারুণ বানানে ণ। খেয়াল রাখতে হবে- দ বা ধ এর সাথে আ-কার বসলে পরে ণ হয়, আ-কার না বলে ন হয়।
'দ্রব্যমূল্য' অথবা 'দ্রব্যের দাম' শুদ্ধ। 'দ্রব্যমূল্যের দাম' কথাটা ভুল, মূল্য মানেই দাম।
উদ্দেশ্য = লক্ষ্য, উদ্দেশ = প্রতি।
সংকট নিরসনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন, ভাষণ শেষে তিনি ব্রিটেনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
লক্ষ = লাখ, দৃষ্টি। লক্ষ্য = উদ্দেশ্য। জীবনের লক্ষ্য পূরণের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। আমার দিকে লক্ষ করো। লক্ষ করে শোনো।
দাঁড়িপাল্লা, দাঁড়ি-মাল্লা, দাঁড়ি-কমা ইত্যাদি সব দাঁড়িতে চন্দ্রবিন্দু থাকলেও কেবল দাড়ি-মোচের দাড়িতে চন্দ্রবিন্দু নেই। কাঁচা ও হাঁড়িতে চন্দ্রবিন্দু আছে, কাচ ও হাড়ে নেই।
ভারি = খুব, ভারী = ওজনদার। ক্লাসের ভারী-ভারী বই পড়তে ভারি কষ্ট লাগে।
ভুল: আমি ও সে যাব।
শুদ্ধ: সে ও আমি যাব।
বাক্যে একাধিক পুরুষ থাকলে উত্তম পুরুষটি শেষে বসবে। ক্রম হবে- সে>তুমি>আমি।
নিচ = নিম্ন, নীচ = জঘন্য। আমাদের নিচতলার ভাড়াটিয়া অত্যন্ত নীচ প্রকৃতির মানুষ।
'পোশাক' বানানে শ।
আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ইত্যাদি সকল জীবী-তে দুটোই দীর্ঘ ই-কার; কিন্তু জীবিকা বানানে ব-য় হ্রস্ব ই-কার অর্থাৎ 'বি'।
সত্য বানানে ত্য, সত্তা বানানে ত্ত, সত্ত্বেও বানানে ত্ত্ব, স্বত্বাধিকারী বানানে ত্ব।
ভুঁড়ি : নাড়ি-ভুঁড়ি
ভূরি : এ জগতে হায় সে-ই বেশি চায়, আছে যার ভূরি-ভূরি!
জোর = শক্তি
জোড় = যুগল
বাবা তাকে জোরে ধমক দিলেন, সে করজোড়ে ক্ষমা চাইল।
জোরাজুরি করলে কারো মনও পাবে না, বেজোড় থেকে জোড়ও হতে পারবে না।
সে পরীক্ষায় বড়জোর ৪০ পাবে।
স্বার্থক না, সার্থক; স্বার্থকতা না, সার্থকতা।
'সে আশায় গুড়েবালি' কথাটা ঠিক নয়, কথাটা হবে 'সে আশার গুড়ে বালি'।
'অন্তরের অন্তঃস্থল' না, 'অন্তরের অন্তস্তল'।
বাংলা একাডেমির অভিধানে কেবল আপস শব্দটাই আছে।
ওঠে' সমাপিকা ক্রিয়া, 'উঠে' অসমাপিকা ক্রিয়া। সে খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে। ঘুম থেকে উঠে ছাদে ওঠে। ছাদে উঠে আকাশ দেখে। অর্থাৎ বাক্যের মাঝে হলে ‘উঠে’, আর বাক্যের শেষে হলে ‘ওঠে’।
লক্ষ্মী, যক্ষ্মা বানানে ক্ষ-এর নিচে একটা ম-ও আছে।
অপরাহ্ণ ও পূর্বাহ্ণ বানানে ণ; সায়াহ্ন, মধ্যাহ্ন, আহ্নিক ও চিহ্ন বানানে ন।
গাঁথা = গ্রন্থন (মালা গাঁথা, সুতো গাঁথা)
গাথা = কবিতা (সাফল্যগাথা, বীরত্বগাথা, জীবনগাথা, দুঃখগাথা)
অঞ্জলি বানানে ই-কার। এভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি, গীতাঞ্জলি।
দূর বানানে দীর্ঘ ঊ-কার; কিন্তু দুর্নীতি, দুর্লভ, দুর্গম, দুর্নাম, দুর্ধর্ষ, দুর্দিন, দুঃস্থ, দুষ্প্রাপ্য, দুর্বল, দুর্গ ইত্যাদিতে হ্রস্ব উ-কার।
দুঃসম্পর্কের আত্মীয় না, দূরসম্পর্কের আত্মীয়।
শীষ- গুচ্ছ। গমের শীষ।
শিস- শুভ কামনা। শব্দটি ‘আশীষ’ বা ‘আশিশ’ নয়, ‘আশিস’। এভাবে শুভাশিস, দেবাশিস, স্নেহাশিস হবে।
'বাংলা ভাষাভাষী' বা 'ইংরেজি ভাষাভাষী' লেখা নিষ্প্রয়োজন, 'বাংলাভাষী' বা 'ইংরেজিভাষী' লিখলেই চলবে।
বেশি = খুব, অনেক
বেশী = বেশধারী (ছদ্মবেশী, ভদ্রবেশী)
সন্ন্যাসী বানানে 'ন্ন্যা', সন্ধ্যা বানানে ‘ন্ধ্যা’।
জ্যেষ্ঠ, জ্যৈষ্ঠ, জ্যোতি, জ্যোৎস্না, ন্যূনতম, ব্যূহ বানানে য-ফলাগুলো কই-কই বসেছে; লক্ষ রাখতে হবে।
ইতিবাচক বাক্যে 'কারণ' বসবে, যেমন:
সে ভালো ফলাফল করেছে, কারণ সে নিয়মিত স্কুলে যায়।
নেতিবাচক বাক্যে 'কেননা' বসবে; যেমন:
সে পাশ করেনি, কেননা সে লেখাপড়ায় মনোযোগী ছিল না।
সে ভালো নেই, কেননা তার বাবা মারা গেছেন।
অর্থাত যেসব বাক্যে ‘না, নি, নেই’ ইত্যাদি আছে; সেসব বাক্যে ‘কেননা’ বসে।
বিদেশি কোনো শব্দেই ‘ষ’ না বসলেও কেবল 'খ্রিষ্ট' শব্দটিতে ‘ষ’ বসবে। 'খ্রিষ্ট' শব্দটি ইংরেজি 'ক্রাইস্ট' থেকে এলেও এটি বাংলা ভাষায় ঢুকে আত্মীকৃত হয়ে গেছে এবং এর উচ্চারণও বদলে গিয়ে সংস্কৃত শব্দ 'কষ্ট', 'নষ্ট' ইত্যাদির মতো হয়ে গেছ। ফলে খ্রিষ্ট, খ্রিষ্টীয়, খ্রিষ্টপূর্ব, খ্রিষ্টাব্দ, খ্রিষ্টান ইত্যাদিতে ‘ষ’ লিখতে হবে।
ভাল - ভালো, কাল - কালো একক শব্দ হিসেবে লিখলে দুটো বানানই ঠিক। কিন্তু এর সাথে অন্য কিছু জুড়ে দিলে 'লো' হবে। যেমন: ভালোবাসা, কালোবাজার।
‘তৈরি’ এবং ‘তৈরী’ দুটো বানানই সঠিক। কিন্তু এর মধ্যে মার-প্যাঁচ আছে। ‘বেশি’ এবং ‘বেশী’ দুটো বানান যেমন সব জায়গায়, সবসময়েই ঠিক। ‘তৈরি’ এবং ‘তৈরী’ দুটো বানান কিন্তু সব জায়গায়, সবসময়েই ঠিক না। প্যাঁচটা এখানে। যদি অতীত ও ভবিষ্যৎকে নির্দেশ করে তবে ‘তৈরী’ অর্থাৎ দীর্ঘ ই-কার ব্যবহৃত হবে আর যদি বর্তমান বা সতত কোন কিছুকে নির্দেশ করে তবে ‘তৈরি’ অর্থাৎ হ্রস্ব ই-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন:
লজিক্যাল বাঙ্গালী জেনুইন মসলা দিয়ে ‘তৈরি’ (সতত অর্থে)।
ফারিহার ‘তৈরী’ আয়না (ইতোমধ্যে ক্রিয়াটি সম্পাদিত, অর্থাৎ অতীত)।
ফারিহা কী যে আয়না ‘তৈরী’ করবে কে জানে? (ভবিষ্যৎ)।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এতো প্যাঁচের দরকার কী? বর্তমান বাংলা একাডেমীর অভিধানে ‘তৈরি’ লিখেছে। ঐটা লিখলেই সব ল্যাঠা চুকে যায়।
‘বুঝা’ এবং ‘বোঝা’ শব্দ দুইটি নিয়ে আমাদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। আমরা অনেকেই "বুঝা" এর জায়গায় "বোঝা" লিখি।
বুঝ (১) = বোধ, বিচার, জ্ঞান। যেমন:
তিনি কী বলেছেন, তার কিছুই বুঝতে পারিনি।
বুঝা গেল তুমি একটা ভুল করেছ।
খেয়াল করলে দেখবেন দ্বিতীয় বাক্যটির "বুঝা" শব্দটি অনেকে ভুল করে "বোঝা" লিখে থাকেন।
বুঝ (২) = প্রবোধ, সান্ত্বনা। যেমন:
তাকে বুঝ দিয়ে লাভ নাই।
তিনি অনেক বুঝানোর (এখানে বোঝানোর হবে না) চেষ্টা করেছেন, লাভ হয়নি।
বোঝা (১) = ভার; মোট।
যেমন: তার বোঝা টানার শক্তি ছিলো না।
সংসারের বোঝা টানতে টানতে আমি হয়রান।
বোঝা (২) = দায়িত্ব। যেমন:
না জেনে এত বড় বোঝা নিতে গেলে কেন?
বোঝাই- পূর্ণ বা ভর্তি। যেমন:
মাল বোঝাই ট্রাকটিকে পুলিশ আটক করলো।
তবে বোঝা অথবা বুঝা দু'টোই ব্যবহৃত হচ্ছে আজকাল। দু'টোই সঠিক। তাই বুঝাপড়া বা বোঝাপড়া-তে কোনো পার্থক্য নেই। (বাংলা একাডেমি প্রণীত ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে এর উল্লেখ আছে)।
শিরোচ্ছেদ বানানটি হবে শিরশ্ছেদ (শ্+ছ = শ্ছ)।
মতদ্বৈততা বানানটি হবে মতদ্বৈধতা।
সান্তনা/শান্তনা বানানটি হবে সান্ত্বনা (ন+ত+ব=ন্ত্ব)।
পঙক্তি, অপাঙক্তেয় বানানে ঙ
অঙ্ক বানানে ঙ্ক (ঙ+ক)
শৃঙ্খলা বানানে ঙ্খ (ঙ+খ)
আকাঙ্ক্ষা বানানে ঙ্ক্ষ (ঙ+ক্ষ)
মনে রাখা দরকার ‘কালীন’ মানেই ‘সময়’। ফলে এ দুটি শব্দ একসাথে বসে না। ভুল: সমকালীন সময়ে শুদ্ধ: সমকালীন ভুল: খেলা চলাকালীন সময়। শুদ্ধ: খেলা চলাকালে/খেলা চলার সময়ে ভুল: গর্ভকালীন সময়ে। শুদ্ধ: গর্ভকালীন/গর্ভাবস্থায়।
১) হ্যাঁ: এটার ব্যাপারে সবাই খুব কিপ্টে। ‘হ্যাঁ’ বানানে চন্দ্রবিন্দু দিতে চায় না কেউ; ‘হ্যাঁ’ বানানে চন্দ্রবিন্দু হবে।
২) জি: আরেকটা ট্রিকি বানান হচ্ছে ‘জি’, যেমন- “হ্যালো, জি বলছি”। এটাকে কেউ জ্বী লেখে, কেউ জ্বি, কেউ জী। শুদ্ধ বানান হচ্ছে ‘জি’।
বর্তমানে আমরা অধিকাংশই ফনেটিক কিবোর্ড ব্যবহার করে বাংলা লেখি। ফনেটিক কিবোর্ড বলতে কম্পিউটারের জন্য অভ্র ও এন্ড্রয়েড ফোনের জন্য রিদ্মিক কিবোর্ডকে বুঝায়। এটি ব্যবহার করে বাংলা লেখা যেমন সহজ, তেমনি অনেক দ্রুত লেখা যায়। কম্পিউটারের অভ্র ব্যবহার করে এমন কোন বাংলা শব্দ নাই যা লেখা যায় না। কিন্তু অনেকেই কোন কোন বর্ণ বা শব্দ অভ্রতে কিভাবে লেখতে হয় তা জানে না, যে কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভুল করে থাকে। অথচ আমরা একটু চাইলেই ভুলগুলো এড়িয়ে যেতে পারি। কারণ অভ্র কিবোর্ডের সাথেই কিছু হেল্প ফাইল পিডিএফ আকারে দেওয়া থাকে, যেগুলো থেকে ফনেটিক ব্যবহার করে কিভাবে যেকোন বর্ণ বা শব্দ লেখা যায় তার ব্যাপারে পুরোপুরি ধারণা পেতে পারি। এজন্যে আপনাকে টাস্কবার থেকে অভ্র আইকনটির উপর মাউস রেখে রাইট বাটন ক্লিক করতে হবে। তারপর সেখানে Help files নামে একটি অপশন দেখতে পাবেন। এটির উপর মাউস রাখলেই আরো কিছু অপশন দেখতে পাবেন, সেখান থেকে Bangla Typing with Avro Phonetic সিলেক্ট করতে হবে। এতে ঐ ম্যানুয়ালটি পিডিএফ রিডারে ওপেন হবে এবং সব নিয়ম জানতে পারবেন। এরপরেও যদি কোন বর্ণ বা শব্দ লিখতে অপরাগ হন তাহলে কমেন্টে বা ইনবক্সে আমাকে জানাতে পারেন, আমি সেটা কিভাবে লিখতে হয় দেখিয়ে দিব। যেমন- ঋতু, এটি লিখতে হবে rritu টাইপ করে; ব্যবহার, এটি লিখতে হবে bybohar টাইপ করে; অ্যাপ, এটি লিখতে হবে oZap টাইপ করে।
১) অভ্র কিবোর্ড ইনস্টল দিয়ে প্রথমবার ওপেন করার পর থেকেই একটি বার স্ক্রিনের একদম উপরে সবসময় ভেসে থাকে, যেটিকে বলা হয় টপ বার। এটি অনেকের কাছে বিরক্তির কারণ হতে পারে। চাইলে এটি হাইড করে রাখা যায়। এজন্য টপ বারটির একদম ডানে যে বাটনটি আছে সেটিতে ক্লিক করে Jump to System Tray সিলেক্ট করতে হবে। তাহলেই এটি টাস্কবারে চলে আসবে এবং চোখের সামনে আর বিরক্তি সৃষ্টি করবে না।
২) অভ্র ফনেটিক ব্যবহার করে বাংলা লেখার সময় একটি প্রিভিউ উইন্ডো আসে, যেখানে কী টাইপ করা হচ্ছে তা দেখা যায় এবং কিছু সাজেশনও দেখায়। তারপরেও যাদের এটির প্রয়োজন পড়ে না বা কোন সাজেশনের দরকার হয় না তাদের কাছে এটি বেশ বিরক্তি সৃষ্টি করতে পারে। চাইলে এটিও বন্ধ করা যায়। এজন্যে টাস্কবারে থাকা অভ্র আইকনটির উপর রাইট বাটন ক্লিক করে Tools থেকে Options এ যেতে হবে। এতে নতুন একটি উইন্ডো ওপেন হবে। উইন্ডোটির বাম পাশ থেকে Avro Phonetic এ ক্লিক করতে হবে। এরপর ডানপাশের Show Preview Window-এর টিক উঠিয়ে দিয়ে নিচ থেকে Apply সিলেক্ট করে সেভ করতে হবে। তাহলে এরপর থেকে লেখার সময় প্রিভিউ উইন্ডোটি আর আসবেনা।
৩) অভ্র ইনস্টল থাকলে প্রতিবার পিসি অন করলেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য একটি স্প্ল্যাশ উইন্ডো শো করে। এটি হয়তো অনেকেই দেখতে চায় না। চাইলে এটিও বন্ধ করা সম্ভব। এজন্যে টাস্কবারে থাকা অভ্র আইকনটির উপর রাইট বাটন ক্লিক করে Tools থেকে Options এ যেতে হবে। এতে নতুন একটি উইন্ডো ওপেন হবে। এই উইন্ডোটির ডান পাশের Show splash screen at startup-এর টিক উঠিয়ে দিয়ে নিচ থেকে Apply সিলেক্ট করে সেভ করতে হবে। তাহলে এরপর থেকে পিসি অন করার সময় স্প্ল্যাশ উইন্ডোটি আর শো করবে না।
এছাড়াও অভ্র কিবোর্ডে বাংলা মোড থেকে ইংলিশ মোডে আসলে মাঝেমাঝে উল্টাপাল্টা লেখা আসে। যে বর্ণ টাইপ করা হয় সেটি না এসে অন্য বর্ণ আসে। ইংলিশ মোড থেকে F12 চেপে বাংলা মোডে গেলে বাংলা আসে, আবার ইংলিশ মোডে ফিরতে F12 চাপলেও হয় না। বাংলাতেই থাকে, তারপরেও ফোনেটিকে না এসে উল্টাপাল্টা আসে। অভ্র ইনস্টলেশনের সময়েই সবগুলো অপশন আনমার্ক করে দিলেই এ সমস্যাটি আর হয় না।
ভবিষ্যৎ অনুসন্ধানের জন্য চাইলে নোটটি আপনারা আপনাদের ব্রাউজারে বুকমার্ক করে রাখতে পারেন। এতে যেকোনো সময় নোটটি ওপেন করে দেখে নিতে পারবেন।
নোটটির শর্ট লিংক: http://bit.ly/BanglaSpelling
এই লিংকের মাধ্যমে যেকোনো সময় নোটটিতে প্রবেশ করা যাবে।
এই নোটটির বানান ও বানানরীতিগুলো ইন্টারনেট ঘেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ব্লগ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এসবেও ভুল থাকতে পারে। এছাড়াও নোটটির অন্যান্য বানানেও ভুল থাকতে পারে, যা অস্বাভাবিক নয়। কোন ভুল দৃষ্টি গোচর হলে অনুগ্রহ করে অবশ্যই কমেন্টে বা ইনবক্সে জানাবেন।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ‘মুক্তচিন্তা’ ব্লগে ‘যুক্তিযুক্ত’ ব্লগারের ব্লগ, বাংলা বানান চর্চা (বাবাচ) ও অন্যান্য।
বিষয়ভিত্তিক সমাধান
প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সমাধান
অনলাইন মডেল টেস্ট
আমাদের সিস্টেম ডেভেলপারগণ এই অপশন নিয়ে কাজ করছে । আগামী ৩১ September অপশনটি শুভ উদ্বোধন করা হবে।
আর মাত্র
বাকি
আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ